Skip to main content

খাদ্যের বদলে টাকা

বিজেপি সরকারের জনবিরোধি নীতি এবং জমি অধিগ্রহনের কালা অর্ডিন্যান্স এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। তারই মধ্যে চুপিসারে এই সরকার গণবণ্টন ব্যাবস্থার বদলে নগদে হস্তান্তরের ব্যাবস্থা চালু করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে যা আদপে মানুষের অধিকারকে আরও খর্ব করবে। সংবাদ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সরকারি পত্রে প্রকাশ আগামি দিনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাইলট প্রোজেক্টের মাধ্যমে আধার কার্ডের সাথে গণবণ্টন ব্যাবস্থাকে সংযুক্ত করে এবং নগদে হস্তান্তরের পদ্ধতি চালু করে বর্তমান গনবণ্টন ব্যাবস্থাকে সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গনবণ্টন ব্যাবস্থা বদলে নগদে হস্তান্তর চালু করার বিষয়ে প্রথম সুপারিশ করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি (শান্তা কুমার কমিটি)। রাষ্ট্রমন্ত্রি সংসদে তার বক্তৃতায় খাদ্য সুরক্ষা আইনে কোন প্রস্তাবিত সংশোধনের সম্ভাবনা নেই বলে জানালেও এই রিপোর্টে ঠিক কি বলা হয়েছে তা এখন স্পষ্ট নয়। কোন রকম গণশুনানি ছাড়াই সরকারের এই বড় সিদ্ধান্ত কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ হওয়ার আগে চার বছর ধরে সংসদের ভেতর এবং বাইরে এই আইন নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। তারপর সর্বসম্মতিক্রমে এই আইন পাশ হয়ে যাওয়ার পরও এই ধরনের অগনতান্ত্রিক পদক্ষেপ আইনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে বিঘ্নিত করে। কর্ণাটক, ওরিস্যা, তামিলনাড়ু এবং মধ্যপ্রদেশের রাজ্য সরকার গণবণ্টন ব্যাবস্থায় নগদে হস্তান্তরের নীতিকে বিরোধিতা করেছে। এমনকি তৎকালীন লোকসভার বিরোধী নেত্রি সুষমা স্বরাজ সংসদে খাদ্য সুরক্ষা আইন আলোচনার সময় একটি সংশোধনি প্রস্তাব আনেন যেখানে তিনি গণবণ্টন ব্যাবস্থায় নগদে হস্তান্তর এবং আধার কার্ডকে বর্জন করার পক্ষে সওয়াল করেন।

আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে দেশের ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কথা মাথায় রেখে একটি শক্তিশালি গণবণ্টন ব্যাবস্থার প্রয়োজন যা দেশের আপামর মানুষকে ভর্তুকি মুল্যে ন্যুনতম খাদ্য শস্যের নিশ্চয়তা দেবে। নগদে হস্তান্তর মানুষকে খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয় না। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি হবে এবং এর দ্বারা গনবণ্টন ব্যাবস্থার বিভিন্ন ফাঁক ফোকর গুলিও সংস্কার করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে রেশন দোকানের  যে নেটওয়ার্ক আছে ব্যাঙ্ক ব্যাবস্থা সেভাবে বিস্তার লাভ করে নি। নগদে হস্তান্তরের ব্যাবস্থা চালু হলে দেশের বিভিন্ন দুস্থ শ্রেনি যেমন পি টি জী, উচ্ছেদ হওয়া মানুষ, একা মহিলা, পরিযায়ী এবং অস্থিতিশীল জায়গার মানুষরা ও বৃদ্ধ মানুষরা এতে সবচেয়ে বেশি আসুবিধায় পড়বেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় বহু জায়গায় ব্যাঙ্ক ব্যাবস্থা এখনও গড়ে ওঠে নি এবং বর্ষাকালে ওই অঞ্চলগুলি বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছারাও পুরুষরা নগদ টাকা নিয়ন্ত্রন করে বলে মহিলারা খাদ্যের উপর তাদের নিয়ন্ত্রন হারাবে। এর উপর নগদে হস্তান্তরের ফলে মানুষ আরও বেশি করে বাজারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং এর ফলে বিশেষত নগরাঞ্চলের নিম্নবিত্তদের মধ্যে জাঙ্ক ফুড কেনার প্রবণতা বাড়বে।

সরকারের হালচাল দেখে মনে হয় তারা গণবণ্টন ব্যাবস্থা পুরোপুরি তুলে দিয়ে মানুষকে বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে চায়। এই ধরনের পদক্ষেপ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা উচিত। গণবন্টন ব্যাবস্থাকে নিস্ক্রিয় করে দিয়ে তার জায়গায় নগদে হস্তান্তর পদ্ধতি চালু করলে পরিবার গুলির খাদ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন, সংগ্রহ এবং সঞ্চয়ের ব্যাবস্থাতেও এর বিরুপ প্রভাব পড়বে। সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু উপভোক্তা বিরোধী নয় একই সাথে কৃষক বিরোধীও বটে। ভারতের কৃষকদের ৮৩% ছোট এবং প্রান্তিক চাষি যাদের মধ্যে অধিকাংশই খাবার কিনে খান। তাদের যেমন নিজের ফলনের জন্য ন্যুনতম সহায়ক মুল্য চাই তেমনি বেঁচে থাকার জন্য সস্তায় খাদ্য শস্যও চাই।

বিগত আট মাসে সরকারের ঘোষিত নীতি দেখে মনে হয় কৃষিকে আরও বেশি কর্পোরেটকরন করার প্রবণতা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। একদিকে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার বৈঠকে চাষিদের এবং খাদ্যের সার্বভৌমত্বের দাবিতে সরকার গলা ফাটাচ্ছে অন্যদিকে তার গুপ্ত এজেণ্ডা হল স্থানীয় কৃষি ব্যাবস্থা এবং কৃষকের জীবিকাকে ধ্বংস করে পুরো কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া। যেখানে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে সেখানে এই ধরনের কালা পদক্ষেপ সংকটময় কৃষিক্ষেত্রকে পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।

বিজেপি তার ইস্তেহারে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে যাতে চাষিরা উৎপাদন মুল্যের উপর ৫০% লাভ রাখতে পারেন সেই ব্যাবস্থা করবে (ন্যুনতম সহায়ক মুল্যের নির্ধারণ করতে জাতীয় কৃষক কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী)। কিন্তু আদতে সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপে এর বিপরীত চিত্রই বেশি চোখে পরছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করে যে রাজ্য সরকারগুলি যে ন্যুনতম সহায়ক মুল্য বাড়ানোর কথা বলেছে তা ধার্য করা হবে না। তারা সাম্প্রতিক কালে সুপ্রিম কোর্টে একটি এফিডেভিট দাখিল করে বলে তাদের পক্ষে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো সম্ভব নয়। এর সাথে কৃষি ক্ষেত্রে আক্রমনের মাত্রা বাড়িয়ে গনবণ্টন ব্যাবস্থার বদলে এখন তারা নগদে হস্তান্তরের পদ্ধতি চালু করতে চাইছে।

এর সাথে আধার কার্ডকে গণবণ্টন ব্যাবস্থার সাথে জুড়ে দেওয়ার ফলে বহু অধিকারি মানুষ এই ব্যাবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এর উপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে কোন ধরণের সরকারি প্রকল্পের জন্য আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। এদিকে খাদ্য সুরক্ষা আইন রুপায়িত করার থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সরকার আদতে আইন ভঙ্গ করছে কারণ আইনে স্পষ্ট বলা ছিল যে এই আইন পাশ হওয়ার এক বছরের মধ্যে তা অবশ্যই রুপায়ন করতে হবে। সুতরাং খাদ্য সুরক্ষা আইন রুপায়নে গা-ছাড়া মনোভাব এবং আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা উভয়ই বেআইনি কাজ।

অতএব জরুরি ভিত্তিতে গণবণ্টন ব্যাবস্থাকে সার্বজনীন রুপ দিয়ে শক্তিশালি করে তুলতে হবে। এর সংস্কারসাধন করে বিভিন্ন ফাঁক ফোকরগুলি মেরামত করতে হবে এবং দেখতে হবে যাতে স্বচ্ছ বণ্টন ব্যাবস্থার মাধ্যমে এর সুফল একদম নীচের তলা অবধি সকলের কাছে পৌঁছে যায়। এর সাথে পঞ্চায়েত এবং গ্রাম সংসদকে আরও সক্রিয় করার মাধ্যমে বিকেন্দ্রিকৃত খাদ্য গ্রহনের ব্যাবস্থার বিস্তার ঘটাতে হবে।

আমরা দাবি করছিঃ
· অবিলম্বে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের সার্বিক রুপায়ন করতে হবে।
· আর্থ সামাজিক জাতি জনসমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে রাজ্য সরকারগুলিকে উপভোক্তা চিহ্নিতকরণের পক্রিয়া শেষ করার কাজে সাহায্য করতে হবে
· গনবণ্টন ব্যাবস্থায় মিলেট, ডাল, তেল এবং চিনি দেওয়া শুরু করতে হবে
· সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত কেন্দ্রীয় তদারকি কমিটির (ওয়াধা কমিটি) সুপারিশ মেনে গনবণ্টন ব্যাবস্থার সংস্কার করতে হবে
· সকারকে সমস্ত রাজ্যে খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য সংগ্রহে উদ্যোগ নিতে হবে। এর সাথে খাদ্য সংগ্রহ এবং সঞ্চয় ব্যাবস্থাকে বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে। চাল এবং গম ছাড়া সরকারকে শাক সবজি এবং ডালও চাষিদের থেকে কিনতে হবে।

লেখাঃ কবিতা শ্রীবাস্তব এবং দিপা সিংহ, আহ্বায়ক, পরিচালন কমিটি, খাদ্যের অধিকার আন্দোলন।
অনুবাদঃ ঋত্বিক বাগচী

Comments

Popular posts from this blog

After 50 days of the “demonetisation” diktat aptly described as a “despotic action”, here is a special year-end update

1. Announcements                                                                                                   RTF Campaign Statement: The Right to Food Campaign has issued a statement to denounce “demonetisation” as a reckless attempt by the government to undermine the right to food and life ( English | Hindi ). The statement condemns the more than 100 demonetisation-related deaths and inevitable economic recession that has hit millions of vulnerable families. The campaign statement demands compensation fo...

Brief Report Of The State Convention of Right to Food and Work Campaign- West Bengal

The Right to Food and Work Campaign-West Bengal successfully completed it state convention on 6 th and 7 th April, 2017 at Badu, Barasat, West Bengal with about 300 delegate from 12 districts.   The conference opened with a reading of the basic statement that had stated the issues we would focus on – food, work and democracy. While the primary focus of the convention were the Rights to Food and Work, it was alarming to note that many of the speakers warned the delegates about the disquieting tendency of  governments and ruling political parties to suppress the democratic voice of the civil society. Shri Swapan Ganguly gave the West Bengal context where even the smallest demand for rights had often to face repression from ruling elite and a small group of very powerful political leaders . these leaders were using the State machinery without any qualms to supress any kind of dissent. The aim seemed to be to have a situation where only the ruler’s voice would be heard....