Skip to main content
IPPL-এ মৃত্যুর উপর তথ্যানুসন্ধান রিপোর্ট, হাজিনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
তদন্তের তারিখ- ১/৪/২০১৮
তদন্তকারি দলের সদস্যদের নাম-
১। জামিরুদ্দিন খান, শ্রম আইনজীবী
২। সায়ন্তি সেনগুপ্ত, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে লড়াই করছেন এই আইনজীবী
৩। আবিদা সুলতানা, যুবকর্মী
৪।  প্রতীপ নাগ, অসংগঠিত শ্রমিক সংগ্রামী মঞ্চ
৫। অনুরাধা তলোয়ার, অসংগঠিত শ্রমিক সংগ্রামী মঞ্চ
আমরা যাদের সাথে দেখা করেছি-
১। দেবাশিষ পাল। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি, নৈহাটি শাখা
২। অরূপ ভৌমিক।গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি, নৈহাটি শাখা
৩। সাজিদ কামাল, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি, নৈহাটি শাখা
৪। অজয় সিংহ, পাট মিলের শ্রমিক, একজন মৃতের আত্মীয়
৫। সৈকত, ছাত্র
৬। কেষ্ট, ছাত্র
৭। জয়িতা,ছাত্রী
৮। সুভাষ ঘোষ, কর্মীবৃন্দ ম্যানেজার, IPPL
৯। পার্থ দে, পাম্প চালক, IPPL
১০। ঐ কারখানার আরও ২-৩ জন শ্রমিক
১১। জয়সয়াল, স্থানীয় বাসিন্দা। ইনি IPPL-এ যানবাহন সরবরাহ করেন।
১২। মহম্মদ আকবর হোসেন, কারখানার উল্টোদিকের মসজিদের ইমাম
১৩। কিছু স্থানীয় লোকজন
১৪। কারখানার নিরাপত্তারক্ষী
১৫। অংশুমান রায়, সভাপতি, হালিশহর পুরসভা
১৬।সমিত ভট্টাচার্য, আইসি, নৈহাটি থানা
কোম্পানি- ইন্ডিয়ান পাল্প অ্যান্ড পেপার প্রাইভেট লিমিটেড
ঠিকানা- দ্বিতীয় তল, মুখার্জি বাড়ি,
      ১৭ নং ব্রেবোন রোড
      কলকাতা- ৭০০০০১
কারখানার ঠিকানা- হাজিনগর, নৈহাটি
ঘটনা-
IPPL –এর কারখানাটিতে ব্যবহৃত পিচবোর্ড বাক্স ও কাগজ পুনঃব্যবহারযোগ্য করে পিচবোর্ড বাক্স/ শিল্পকর্মে ব্যবহৃত কাগজ এবং খবরের কাগজ তৈরি হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটে ETP-এর একটি কুয়োয়। কর্মীবৃন্দের অফিসার সহদেব ঘোষের মতে প্রধান কক্ষে পুরোনো কার্টুনগুলিকে পুনরায় মণ্ডে পরিণত করার পর অবশিষ্ট কর্দমাক্ত পদার্থ ও জল ফেলা হয় ঐ কুয়োতে। এরপর ঐ কর্দমাক্ত পদার্থ থেকে জল আলাদা করে নেওয়ার পর প্রধান কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি চলাকালীন ঐ কর্দমাক্ত পদার্থ প্রথমে একটি ট্রলিতে সংগ্রহ করা হয় এবং তারপর প্রধান কক্ষে চালান করা হয়। কারখানাটি যেহেতু গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত তাই অবশিষ্ট অল্প পরিমাণ জল নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। যে কুয়োতে এই কর্দমাক্ত পদার্থটি থেকে জল আলাদা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় সেটি প্রায় ২২ ফুট গভীর এবং কুয়োটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিচে নামার জন্য লোহার রড আছে কুয়োটির পাশে। ২৮শে মার্চ ২০১৮-তে কুয়োতে একটি ফুটো দেখা যায়। একজন মিস্ত্রিকে ডাকা হয় এটি সারানোর জন্য। কিন্তু কুয়ো থেকে ওঠার পর তিনি জানান যে ফুটোটি মেরামত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য দুই মিস্ত্রি মিঠুন এবং উদয় এরপরে কুয়োয় নামে। মিঠুন একটি ভাল্বে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে যেটা আগের মিস্ত্রি খুলতে পারেনি এবং আঘাতের ফলে একটি গ্যাস বেরনো শুরু হয়। দুজনেই ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং এরপর আগে যে ব্যক্তি কুয়োয় নেমেছিলেন[নাজিম] তিনি বাকিদের উদ্ধার করতে কুয়োয় নামেন। তিনিও আর উঠে আসেননি। এরফলে কুয়োর চারপাশে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্য তিনজন ব্যক্তি[ অমিত যাদব, অশোক বোড়াল, বিজয় বেনবাশি] কুয়োর মধ্যে নামেন বাকি তিনজনকে উদ্ধার করার জন্য, কিন্তু তাঁরাও আর উঠে আসেননি। এরপর অগ্নিনির্বাপক দলকে ডাকা হয়। অগ্নিনির্বাপক দলের একজন কর্মী নীচে নামেন এবং দুটি লাশ নিয়ে উপরে উঠে আসেন কিন্তু পুনরায় নীচে নামতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন কুয়োর ভেতরে তিনি অস্বস্তি অনুভব করছিলেন এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। কারখানার অন্য শ্রমিকেরা এরপর কারখানার একটি হুক ব্যবহার করে দুটি বা তিনটি লাশগুলি বের করে আনেন।অবশেষে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী আসে এবং বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত কর্মীবৃন্দ বাকি লাশগুলি বের করে আনেন। একদল প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকেরা জানান, দেহগুলি যখন বের করে আনা হয় তখন তারা প্রত্যেকেই মৃত ছিল। কারখানার চেয়ারম্যান বলেন যদিও জানান যে প্রথম যে দুজন কুয়োয় নেমেছিলেন তাঁরা জীবিত ছিলেন কিন্তু হসপিটালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে দেহগুলিকে যখন উদ্ধার করা হয়েছিল তখন সেগুলি সম্পূর্ণ কালো হয়ে গিয়েছিল।
ছয় জন দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা-
১। অমিত যাদব, পিতা- জগন্নাথ যাদব, দ্বারিক জঙ্গল রোড, পোস্ট অফিস- হাজিনগর, পিন- ৭৪৩১৩৫, পশ্চিমবঙ্গ
২। অশোক বোড়াল, পিতা- শেখর চন্দ্র বোড়াল, বালিভারা, পোস্ট অফিস- নবনগর, পিন- ৭৪৩১৩৬, পশ্চিমবঙ্গ
৩। বিজয় কুমার বেনবাশি, পিতা-  নন্দলাল বেনবাশি, বানাকপারা রোড, পোস্ট অফিস- হাজিনগর, পশ্চিমবঙ্গ
৪। মিঠুন কুমার, পিতা- মৌনী রাম, গ্রাম- সঙ্গসরন, রামপুর, উত্তরপ্রদেশ
৫। উধয় রাজ সিং, পিতা- গঙ্গারাম সিং, গ্রাম- মাসুরপুর, মোরাদাবাদ, -উত্তরপ্রদেশ
৬। মহম্মদ নাজিম, পিতা- সাদ্দিক হোসেন, গ্রাম- কাশিপুর, ইউ.এস নগর, উত্তরাখণ্ড।
সমস্যা-
পেশাগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা-
কর্মীবৃন্দ ম্যানেজার দাবী করেন প্রথম দুই ব্যক্তি মাস্ক, সেফটি বেল্ট ও হেলমেট পরেছিল কিন্তু তাঁদের কোমরে সেফটি বেল্টের সঙ্গে যে দড়িটি বাঁধা ছিল সেটা ছিঁড়ে যায়। তাঁর মতে প্রথম যে ব্যক্তিটি কুয়োতে নেমেছিলেন অর্থাৎ নাজিম এবং বাকি তিনজন যারা কুয়োর আটকে পড়া কর্মীদের উদ্ধার করতে নেমেছিলেন তারা কর্মীদের উদ্ধার করার তাড়াহুড়োতে নিরপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করেনি এবং কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।
যে কর্মীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি তারা জানায় যে কোন নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহৃত হয়নি।তারা বলেন ঘটনাস্থলে একটি দড়ি ছিল কিন্তু সেটি ব্যবহার করা হয়নি কারণ কর্মীরা সাধারনত ঐ কুয়োতে নামতে দড়ি ব্যবহার করত না। শ্রমিকেরা এও জানান যে ঐ কুয়োটি বছরে মাত্র একবার পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। এরকম দুর্ঘটনা আগে কোনোদিন এখানে ঘটেনি।
তারা এও জানান যে দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড কোম্পানিকে ETP-এর ভাল্ব ঘোরাতে নিষেধ করেছিল[ সম্ভবত নোংরা জল যাতে গঙ্গায় না পড়ে সে জন্য]। একটি ভাল্ব সিল করে দেওয়া হয় এবং অনুরূপ একটি ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও মিস্ত্রীকে ভাল্বটি ঘোরানোর কথা বলা হয়েছিল এবং মিস্ত্রি ঐ বিকল্প পথটির উপর হাতুড়ি মারে। যার ফলে পাইপে চিড় ধরে এবং ফুটো হয়ে যায়।
কর্মীবৃন্দ মানেজার জানান যে উক্ত পদ্ধতিতে কোনরকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হত না। একজন কর্মী জানান যে রাসায়নিক বলতে শুধুমাত্র PSE এবং স্টার্চ ব্যবহার করা হত। তিনি স্বীকার করেন যে নির্গত গ্যাসটি অন্য কোন রাসায়নিকের গন্ধ নয় বরং ঐ কর্দমাক্ত পদার্থের পচনের ফলে তৈরি হয়েছে।
শ্রমিকদের মতে কারখানায় প্রতিটি শিফটে প্রায় ১৫০-২০০ জন কর্মী কাজ করেন কিন্তু কোম্পানি মাত্র ১৫টি নিরাপত্তা মুখোশ দেয় এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় আশয় নিয়ে কোন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। কোন নিরাপত্তা অফিসারও নেই ঐ কারখানায়।
কারখানা চত্বরটিও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং বিপজ্জনক, চারপাশে কঙ্কালসার অবস্থা, বেরিয়ে আছে মরচে ধরা রড, যেন যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়বে, কর্দমাক্ত মিশ্রণটি অত্যন্ত নোংরা এবং খুবই বিপজ্জনক। এমনকি আমরাও ঐ বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধ পেয়েছি।
কর্মীরা দাবী করেন তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বহুবার কথা বলেছেন কিন্তু কোন ফল হয়নি।
একজন চটকল শ্রমিকের মতে এই কারখানার আগের দুর্ঘটনাগুলি ক্ষেত্রে লাশগুলিও পাওয়া যায়নি।
কার্য-পদ্ধতির অবস্থা-
এই কারখানায় প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন এবং ৫০ জন কর্মকর্তা ও অফিসকর্মী কাজ করেন। বেশিরভাগ কর্মীদেরই PF এবং ESIS-এর ব্যবস্থা আছে। কর্মীদের যে বেতন দেওয়া হয় তা নুন্যতম মজুরির থেকে অনেক কম, যারা দৈনিক মজুর তাঁদের ক্ষেত্রে মজুরির হার দিনে ১৮০টাকা এবং যারা ESIS এবং PF- এর  আওতায় পড়েন তাঁদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে দিনে ২০০ টাকা এবং দিনে ২২০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।যদিও  এই ব্যবস্থার জন্য বিধিবদ্ধ নুন্যতম মজুরি হল দিনে ২৯৫ টাকা।
এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে শ্রম দপ্তর এবং নুন্যতম মজুরির তদারককারী অফিসাররা এ বিষয়ে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেননি। তাই শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি প্রদানের ঘটনাটি চোখে পড়েও পড়ছেনা কারও।
ETP-এর মান-
আমাদের প্রতিনিধি যখন ETP টি দেখতে গিয়েছিলেন তারা দেখেন ইকুয়ালাইজেশান ট্যাঙ্কে কর্দমাক্ত মিশ্রণটি অপরিশোধিত ও খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এও দেখা গিয়েছে যে  ভাল্ব এবং মাল্টিমিডিয়া ফিল্টারের বিভিন্ন অংশে মরচে পড়েছে যা দেখেই বোঝা যায় যে দীর্ঘদিন ধরে প্ল্যান্টটির রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়নি। প্রাইমারি ট্যাঙ্কটি একদম শুকনো ও খালি ছিল যা দেখেই বোঝা যায় নোংরামিশ্রিত জল কোনভা বেই পরিশোধন করা হয়না।
পুলিশ কেস-
অজিত যাদবের পরিবার থেকে একটি FIR দায়ের করা হয়েছে।আইসি-এর বক্তব্য অনুযায়ী পরবর্তীতে বিজয় কুমার বেনবাঁশি এবং অশোক বোড়ালের আত্মীয়ের তরফ থেকেও FIR দায়ের করা হয় এবং তা পূর্বের FIR-এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আইসি-এর বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত FIR গুলি [ থানা- নৈহাটি, কেস নম্বর- ২২৩/১৮, U/D Case No 164/18, 165/18, 166/18, 167/18, 167/18 এবং কল্যানি থানার ১৬৯/১৮] কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩০৪ নং ধারায় [নিন্দনীয় হত্যা]  দায়ের করা হয়েছে। আইসি দাবী করেন যে এই কেসটি কখনই আপোষযোগ্য নয় এবং অভিযোগকারীগণ কেস তুলতে চাইলেও তুলতে পারবেন না।
পরিযায়ী শ্রমিক
যে দুজন কর্মী মারা গেছেন তাঁরা উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের থেকে পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। আইসি জানিয়েছেন যে তাঁদের পরিবার এসে দেহগুলি নিয়ে গেছে এবং তিনি তাঁদের শ্রমিকদের আত্মীয়দের মধ্যে একজনকে পরে দেখা করতে বলেছেন তদন্তের কাজে সহযোগিতার জন্য। যদিও এটা কোথাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে মৃতের পরিবার কিভাবে তাঁদের প্রাপ্য সুযোগসুবিধা ও ক্ষতিপূরণ পাবেন।
ক্ষতিপূরণ-
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবার পিছু ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গত ১/৪/২০১৮ যখন আমরা এলাকা পরিদর্শনে যাই আমরা স্থানীয় তিনজন মৃতের পরিবার থেকে জানতে পারি যে তারা ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের চেক পেয়েছেন।
১লা এপ্রিলে হালিশহর পুরসভার সভাপতি অংশুমান রায়ের তত্বাবধানে একটি মিটিং-এর আয়োজন করা হয়েছে। তিনজন MLA [অর্জুন সিংহ, পার্থ ভৌমিক, সুভ্রাংশু রায়] এবং ভাটপাড়া ও নৈহাটি পুরসভার সভাপতিগণ এই মিটিং-এ উপস্থিত ছিলেন। তিন জন স্থানীয় মৃতকর্মীর পরিবারও উপস্থিত ছিলেন। পাওয়ান আগরওয়াল ও আরও একজন ব্যক্তি কারখানার তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন। অংশুমান রায়ের উপস্থিতিতে নিচের শর্তগুলিতে সবাই সহমত পোষণ করেছেন-
১। পরিবারগুলি ক্ষতিপূরণ হিসেবে কারখানায় চাকরির প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
২। ৩টি পুরসভা থেকে প্রস্তাব আসে যে তারা ৬টি পরিবার থেকে ৬জন কে চাকরি দেবে উক্ত তিনটি পুরসভায়।
৩। কোম্পানিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে সমস্ত বাকী PF  এবং ESIS-এর যত শীঘ্র সম্ভব জমা দিতে হবে।
৪। মৃত শ্রমিকদের পরিবার, পরিবার পিছু ১০লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করেছে। অনেক টালবাহানার পর কোম্পানির কর্মকর্তারা তা মেনে নেন। তারা জানান পরবর্তী ১ সপ্তাহে তারা ক্ষতিপূরণের ২ লাখ টাকা দেবে এবং বাকি ৮ লাখ টাকা তারা প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে দেবে।
৫। কোম্পানির কর্মকর্তারা নিহতদের পরিবারগুলিকে অনুরোধ করেন যে তারা যেন পুনরায় কোম্পানি খোলার অনুমতি দেন। সভাপতি ও অন্যান্য নেতারাও একই অনুরোধ রাখেন।
৬। সভাপতি কারখানার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপের প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন যে কর্মকর্তাদের অবশ্যই নিরাপত্তার ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে।
৭। আগামি সপ্তাহের মধ্যে উপরিউক্ত শর্তগুলি তুলে ধরে একজন আইনজীবী একটি চুক্তিপত্র তৈরি করবেন যা প্রত্যেকটি পক্ষ সই করবেন এবং এর একটি করে কপি প্রত্যেক পক্ষের কাছে থাকবে।
মিটিং পরবর্তীতে তিনটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় যে তারা ঐ ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের প্রস্তাবে রাজি রয়েছেন এবং FIR তুলে নিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
দূষণ-
কারখানার পাশেই অবস্থিত একটি মসজিদের ইমামের সঙ্গে এবং আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে একবার কারখানার চিমনি চালু হলে তাদের বাড়িঘর, মসজিদের মেঝে এমনকি খেতে বসলে খাবারটুকুও ছাইয়ে ভরে যায়  কারখানার চিমনি চালু হলে। তারা এও জানান যে দূষণের কারণে তাঁদের চামড়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইমাম এবং আশেপাশের লোকেরা তাঁদের চামড়ার সমস্যা আমাদের প্রতিনিধিদের দেখান। তাদের দাবী ২০০৬ সালে নতুন ম্যানেজমেন্ট দায়িত্বে আশার পর থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে। তাঁদের মতে, এই দূষণ ছড়ানোর কারণ হল পূর্বের লম্বা ও উঁচু চিমনিটি ভেঙ্গে পড়ায় নতুন একটি ছোট চিমনি তৈরি করা হয় যার থেকেই এই দূষণ ছড়াচ্ছে।
গত ২১ শে মে ২০১৭-তে ইমাম এবিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে হালিশহর পুরসভায় চিঠি দেন যার কপি তিনি আমাদের প্রতিনিধিদের দেখান। যদিও চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এরকম কোন চিঠি বা অভিযোগের কথা মনে করতে পারেননি। তখন আমরা তাঁর হাতে সেই চিঠির কপি দিই।
সরকারী তদারকি-
কর্মীবৃন্দ অফিসার জানান ‘গঙ্গা কর্ম পরিকল্পনা’ চলাকালীন তাঁদের  কারখানা অনলাইন নজরদারির আওতায় ছিল। যদিও তাঁরা কোনদিনই কেন্দ্র বা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডকে কোন অভিযোগপত্র জমা দেননি। তবে যান্ত্রিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক রিপোর্ট কারখানার তদারককারীকে জমা দিতে হয় তাঁদের।
কারখানার ভগ্নদশা ও বিপজ্জনক হাল দেখেই বোঝা যায় যে সুষ্ঠু ও নিয়মমাফিকভাবে কারখানার তদারকি করা হয়না।  নিরাপত্তার দিকটি পুরোপুরি ভাবেই অবহেলিত।
এই ক্ষেত্রের অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষিত মজুরি হল দিনে ২৯৫ টাকা। কিন্তু কর্মীদের দিনে মাত্র ১৮০-২২০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এবং শুধু তাই নয় কারখানায় যে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন তার মধ্যে মাত্র ২৫০ জন হলেন স্থায়ী শ্রমিক এবং বাকি ৫০জন হলেন নৈমিত্তিক এবং অস্থায়ী শ্রমিক। যদিও এই ৫০ জন কমবেশি প্রায় নিয়মিতই কাজ করেন। শ্রম দপ্তর এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেয়নি।
দূষণের উপর আলাদা একটি রিপোর্ট[ IPPL-এর পরিবেশ লঙ্ঘন] তৈরি করা হয়েছে।
দূষণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুরসভাও কোন সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি।
উপদেশ/সুপারিশ-
আমাদের প্রতিনিধিদের মনে হয়েছে যে কারখানার কর্মকর্তা এবং পরিচালন কমিটিকে নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নেওয়া প্রয়োজন-
১। পরিবারের প্রধান রোজগেরে সদস্যদের হারানোর দরুন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকার ও কারখানার কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ ধরা হবে।
২। কারখানার মালিক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা উচিত এবং মালিকপক্ষের অবহেলার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তস্বরূপ শাস্তি দেওয়া উচিত।
৩। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড, হালিশহর পুরসভা এবং শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি অনুসন্ধান চালান উচিত যে কারখানার বিরুদ্ধে কেন কোনরকম পদক্ষেপ নেওয়া হল না।
৪। কারখানার অন্তর্বর্তী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং কারখানার চারপাশের পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যত শীঘ্র সম্ভব পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments

  1. তথ্যবহুল প্রতিবেদন ছিল এটা, ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

After 50 days of the “demonetisation” diktat aptly described as a “despotic action”, here is a special year-end update

1. Announcements                                                                                                   RTF Campaign Statement: The Right to Food Campaign has issued a statement to denounce “demonetisation” as a reckless attempt by the government to undermine the right to food and life ( English | Hindi ). The statement condemns the more than 100 demonetisation-related deaths and inevitable economic recession that has hit millions of vulnerable families. The campaign statement demands compensation fo...

Brief Report Of The State Convention of Right to Food and Work Campaign- West Bengal

The Right to Food and Work Campaign-West Bengal successfully completed it state convention on 6 th and 7 th April, 2017 at Badu, Barasat, West Bengal with about 300 delegate from 12 districts.   The conference opened with a reading of the basic statement that had stated the issues we would focus on – food, work and democracy. While the primary focus of the convention were the Rights to Food and Work, it was alarming to note that many of the speakers warned the delegates about the disquieting tendency of  governments and ruling political parties to suppress the democratic voice of the civil society. Shri Swapan Ganguly gave the West Bengal context where even the smallest demand for rights had often to face repression from ruling elite and a small group of very powerful political leaders . these leaders were using the State machinery without any qualms to supress any kind of dissent. The aim seemed to be to have a situation where only the ruler’s voice would be heard....